• ঢাকা
  • | বঙ্গাব্দ
Techogram

যশোরের চৌগাছায় পুলিশের গুলিতে পা হারানো দুই শিবির নেতার বাড়িতে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দল


FavIcon
শাহরিয়ার সীমান্ত
নিউজ প্রকাশের তারিখ : Oct 15, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন: ad728

চৌগাছা প্রতিনিধি : যশোরের চৌগাছায় পুলিশের গুলিতে পা হারানো দুই শিবির নেতার বাড়িতে গিয়ে ঘটনার তদন্ত করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের তদন্ত সংস্থার একটি প্রতিনিধি দল। 

গত মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতিনিধি দলটি তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন। 

এ সময় গুলিতে পা হারানো দুই শিবির নেতা উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের রুহুল আমিন এবং চুটারহুদা গ্রামের ইসরাফিলের বাড়িতে যান। তাদের বাড়িতে গিয়ে দুই শিবির নেতার বাবা ও মা'র সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের উপ-পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেনের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলটি।
এসময় সেদিনের লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন রুহুল আমিনের মা নাজমা বেগম এবং ইসরাফিলের পিতা আব্দুর রহমান।

এর আগে প্রেসক্লাব চৌগাছায় তদন্ত দল সাক্ষ্য নেন উপজেলার ফুলসারা ইউনিয়নের চারাবাড়ি গ্রামের তিন বিএনপি সমর্থকের। তাদেরকে ২০১৬ সালে পুলিশ আটক করে রুহুল আমিন ও ইস্রাফিল হোসেনের মামলার আসামি হিসেবে জেলে পাঠায়। ২৬ দিন পর তারা জামিনে মুক্তি পান। ওই তিন বিএনপি সমর্থক তদন্ত সংস্থাকে জানান আজও তারা ওই মামলায় নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন। মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। তারা আরও বলেন, জেল থেকে বের হওয়ার পর আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে রুহুল আমিন ও ইস্রাফিল হোসেনের সাথে তাদের পরিচয় হয়।   

এ ঘটনায় এরআগে গত ২৮ আগষ্ট প্রতিনিধি দলটি ঘটনার তদন্ত করেন। মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে ২য় বারের মতো এলাকার সাধারণ মানুষ  ট্রাইব্যুনালের তদন্তকারী প্রতিনিধি দলের সামনে স্বাক্ষ্য দেন।


এসময় স্বাক্ষ্যদাতারা ও ভুক্তভোগির স্বজনরা বলেন, পতিত সরকারের শাসন আমলে ২০১৬ সালের ৩ আগস্ট তৎকালিন চৌগাছা থানার ওসি মশিউর রহমান, সেকেন্ড অফিসার এস আই আকিকুল ইসলামক, এস আই মখলেস, এএস আই মাজেদ হোসেন, এসআই মোমিনুর রহমান, এসআই জামাল ও তাদের সঙ্গীরা তাদেরকে মহেশপুর-চৌগাছা সড়কের টেঙ্গুরপুর মোড় থেকে কোন কারণ ছাড়াই আটক করে চৌগাছা থানায় নিয়ে সারা রাত ওসির রুমে নির্যাতন করে ওসি এম মশিয়ুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা। পরদিন ৪ আগস্ট সকালে তাদেরকে নাস্তা প্রদানও করে স্বজনরা। এরপর তাদের যশোরে আদালতে নেয়ার নাম করে যশোর নিয়ে তাদের আদালতে না নিয়ে গুম করে পুলিশ। স্বজনরা সারাদিন আদালতসহ বিভিন্নস্থানে খোঁজ খবর না পেয়ে ফিরে আসে বাড়িতে। ওইদিন গভীর রাতে নারায়নপুর ইউনিয়নের বুন্দেলীতলা সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সন্নিকটে বুন্দেলীতলা-নারায়নপুর সড়কের পাশে একটি পুকুর পাড়ে তাদের দুজনের পায়ের হাটুতে গুলি করে ক্রসফায়ারের নাটক সাজায় পুলিশ। পরিদন ৫আগস্ট সকালে পরিবারের সদস্যরা যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতলে তাদের পুলিশ প্রহরায় খুঁজে পায় স্বজনরা। তখন পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন ৪আগস্ট যশোর ডিবি অফিসে নিয়ে দিনভর তাদের নির্যাতন করা কয়। আরও জানতে পারেন উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের বুন্দলীতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে নিয়ে মিথ্যা নাটক সাজিয়ে দু’জনের পায়ে গুলি করে পুলিশ। গুলি করেই খ্যান্ত হয়নি বর্বর পুলিশ সদস্যরা। দুজনের গুলিবিদ্ধ ক্ষতস্থানে বালু ভরে দেয়, যেন ভবিষ্যতে পচন ধরে। ওইরাতেই সেখান থেকে তাদেরকে চৌগাছা সরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে জরুরী বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক তাদের যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাদের ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে রেফার্ড করলেও পুলিশ পরদিন ৫আগস্ট তাদের নামে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দেশিয় অস্ত্র উদ্ধারের নাটক সাজিয়ে তাদের নামে মামলা করে পুলিশ। আটক অবস্থায় তারা যেন সঠিক চিকিৎসা করতে না পারে সেজন্য পরিবারের কাছে একলক্ষ টাকা দাবি করে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি রাখে।

পরে অনেক প্রচেষ্টার পর তাদের ঢাকা পঙ্গুতে নেয়া হয়। ততদিনে তাদের পায়ে পচন ধরে। ফলে ইসরাফিল হোসেনের ও রুহুল আমিনের ১টি করে পা কেটে বাধ্য হন চিকিৎসকরা।

এ ঘটনায় ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট আওয়ামী সরকার পতনের পরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করে দুই শিবির নেতা। 
ট্রাইবুন্যালের উপ-পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমরা এর আগেও একবার ঘটনাস্থলে পৌছে স্থানীয়দের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেছি। তিনি বলেন, এ ঘটনায় এস.আই. আকিকসহ তিনজন পুলিশ সদস্যকে আটক করা হয়েছে।  এই ঘটনার সাথে যারা জড়িত ছিলনা তাদের কেউ জড়িয়ে না যায় সে কারনে  স্বচ্ছতার জন্য ২য় বারের মতো স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। তদন্ত রির্পোট সংশ্লিষ্ট শাখায় পৌঁছ দেয়া হবে।