• ঢাকা
  • | বঙ্গাব্দ
Techogram

নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগে পরীক্ষা বর্জন,মনিরামপুরের চাকলা মাদরাসার দুই পদের নিয়োগ স্থগিত


FavIcon
শাহরিয়ার সীমান্ত
নিউজ প্রকাশের তারিখ : Oct 12, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন: ad728

মনিরামপুর প্রতিনিধি : যশোরের মনিরামপুরে চাকলা ফাজিল মাদরাসায় চারটি পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। 

অভিযোগ উঠেছে, ২০২৩ সালে চাকলা মাদরাসায় উপাধ্যক্ষ, এবতেদায়ী প্রধান, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ও আয়া পদে নিয়োগ চেয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে যথাসময়ে নিয়োগ সম্পন্ন করতে পারেননি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। তিনধাপে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আজ শুক্রবার মাদরাসা মাঠে নিয়োগ বোর্ড বসে। এসময় নিয়োগ বোর্ডের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে আবেদনকারীদের আট জন পরীক্ষার্থী মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা পরিচালকের প্রতিনিধি বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে পরীক্ষা বর্জন করেছেন। তাদের আবেদনের পর কাঙ্খিত পরীক্ষার্থী না থাকায় ওই পদে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। এছাড়া কাঙ্খিত পরীক্ষার্থী হাজির না হওয়ায় নিয়োগ বোর্ড সম্পন্ন হয়নি আয়া পদেও।

পরীক্ষায় না বসা ৮ নিয়োগ প্রার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে বলেন, পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে আমরা ১২ জন আবেদন করেছিলাম ২০২৩ সালে। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ একাধিকবার নিয়োগ বোর্ডের তারিখ ঘোষণারপরও যথাসময়ে পরীক্ষা নিতে পারেননি। আজ (শুক্রবার) আমরা ৯ জন নিয়োগ পরীক্ষা দিতে আসি। কেন্দ্রে এসে শুনি ১২ লাখ টাকায় আগে থেকে গোপনে একজনকে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগের সব সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। এ কারণে আমরা আট জন মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা পরিচালকের প্রতিনিধি বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে পরীক্ষা বর্জন করেছি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাকলা ফাজিল মাদরাসায় চারটি শূন্য পদে নিয়োগের জন্য ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেন মাদরাসার অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। ওই বিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগ না দিয়ে ২০২৪ সালের ১৪ মে আবার পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। তাতেও নিয়োগ না দিয়ে তৃতীয় বারের মত চলতি বছরের ৫ আগষ্ট ফের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আজ (শুক্রবার) সকালে চাকলা মাদরাসায় নিয়োগ বোর্ড বসে।

মাদরাসা সূত্র বলছে, ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে ওই অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশিক্ষণ) সামিউল ইসলাম, মাদরাসার সভাপতি সোহরাব আলী, অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ও একজন শিক্ষক প্রতিনিধির সমন্বয়ে নিয়োগ বোর্ড বসে। 

বোর্ডে ৫০ নম্বরের পরীক্ষায় উপাধ্যক্ষ পদে ৫ জন অংশ নিয়ে চাকলা ফাজিল মাদরাসার আরবী শিক্ষক হাবিবুর রহমান ও এবতেদায়ী প্রধান পদে চার জন অংশ নিয়ে আব্দুর রহমান নামে এক শিক্ষক নিয়োগ পান।

পরীক্ষায় না বসাদের অভিযোগ, আজ নামমাত্র নিয়োগ বোর্ড বসেছে। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ আগে থেকে উপাধ্যক্ষ পদে এক লাখ টাকা নিয়ে নিজেদের শিক্ষক হাবিবুর রহমানকে, দুই লাখ টাকায় এবতেদায়ী প্রধান আব্দুর রহমানকে, ১২ লাখ টাকায় অফিস সহকারী পদে একজনকে মনোনীত করে রেখেছিলেন। আর আয়া পদে যাকে মনোনীত করে রেখেছিলেন তিনি মাদরাসা কর্তৃপক্ষের চাহিদামত টাকা দিতে চেয়েছেন।

চাকলা ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য মতিউর রহমান বলেন, নিয়োগ বোর্ডে আবেদনকারীদের মধ্যে কমপক্ষে তিনজন আবেদনকারীকে উপস্থিত থাকতে হয়। শর্তপূরোণ হওয়ায় আমরা উপাধ্যক্ষ পদে হাবিবুর রহমান ও এবতেদায়ী প্রধান পদে আব্দুর রহমানের নিয়োগ চুড়ান্ত করতে পেরেছি। অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে উপস্থিত নয় জনের মধ্যে আট জন পরীক্ষা দিতে রাজি হননি। তারা বিভিন্ন অভিযোগ তুলে  মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে ওই অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ) সামিউল ইসলামের বরাবর লিখিত দিয়ে পরীক্ষা দিতে রাজি হয়নি। আর আয়া পদে ৬জন আবেদনকারীর মধ্যে একজন উপস্থিত হয়েছেন। এজন্য এই দুই পদে নিয়োগ সম্পন্ন হয়নি।

অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেন, আমরা কোন পদের জন্য টাকা নেওয়া বা কারও সাথে চুক্তিবদ্ধ হইনি। টাকা নিয়ে নিয়োগ বোর্ড বসানোর অভিযোগ সত্য না।
তিন বার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কারণ জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, প্রথমবার কাঙ্খিত আবেদনকারী পাওয়া যায়নি। ২০২৪ সালের নিয়োগ বোর্ড বসার তারিখ নির্ধারণ ছিল ৯ আগষ্ট। ৫ আগষ্ট সরকার পরিবর্তন হওয়ায় উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে নিয়োগ বোর্ড বসানো সম্ভব হয়নি।