ভোটে অবহেলা-অনিয়মে কঠোর শাস্তি: ইসি’র ক্ষমতা বাড়ল
শাহরিয়ার সীমান্ত
নিউজ প্রকাশের তারিখ : Oct 7, 2025 ইং
আইন ডেস্ক / স্বপ্নভূমি: নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) অধ্যাদেশ জারি: মতবিরোধে প্রাধান্য পাবে ইসি; অসদাচরণের জন্য কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। নির্বাচনী দায়িত্বে অবহেলা ও অনিয়মের শাস্তি বৃদ্ধি এবং ইসির ক্ষমতা জোরদার করে দুটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে।
রোববার (৫ অক্টোবর) আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক 'নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫' এবং 'নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫'-এর গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। এই আইন সংশোধনের ফলে ভোটে অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পথ প্রশস্ত হলো, যা ২০২২ সালে গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচনের পর কার্যকর ব্যবস্থা নিতে না পারার সমালোচনা থেকে বেরিয়ে আসার ইঙ্গিত।
নির্বাচন কর্মকর্তাদের শাস্তি ও ইসির প্রাধান্য
সংশোধিত 'নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ'-এর মাধ্যমে নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তিকে 'নির্বাচন কর্মকর্তা'র সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই অধ্যাদেশের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:
অসদাচরণ ও শাস্তি
অসদাচরণ: কোনো নির্বাচন কর্মকর্তা ইচ্ছাকৃতভাবে কমিশন বা রিটার্নিং অফিসারের আদেশ পালনে ব্যর্থ হলে বা নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো আইন লঙ্ঘন করলে অথবা কর্তব্যে অবহেলা করলে তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে।
শাস্তির পরিধি: অসদাচরণের জন্য নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অপসারণ বা বরখাস্ত করতে পারবে, বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করতে পারবে বা পদোন্নতি/বেতন বৃদ্ধি অনধিক ২ বছরের জন্য স্থগিত রাখতে পারবে।
কমিশনের ক্ষমতা: অসদাচরণের ক্ষেত্রে কমিশন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শৃঙ্খলামূলক কার্যধারা গ্রহণের সাপেক্ষে, তাকে অনধিক ২ মাসের জন্য সাময়িকভাবে চাকরি থেকে বরখাস্তের আদেশ দিতে পারবেন।
কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড: কমিশনের আদেশ প্রতিপালন না করলে ওই কর্মকর্তা অনধিক পাঁচ বছর এবং অন্যূন এক বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। অন্য বিধান লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে অনধিক এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড হতে পারে।
সরকার ও ইসির মতবিরোধ
অধ্যাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত কোনো বিধান সম্পর্কে সরকার ও কমিশনের মধ্যে ভিন্নমত দেখা দিলে, কমিশনের সিদ্ধান্তই প্রাধান্য পাবে। এটি নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা ও স্বাধীনতাকে আরও জোরদার করল বলে মনে করছেন ইসি কর্মকর্তারা।
ইসি সার্ভিস চালুর অধ্যাদেশ
অন্যদিকে, ‘নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারির মাধ্যমে ইসি কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিনের একটি দাবি পূরণ হলো। এই সংশোধনীতে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের জন্য ‘নির্বাচন কমিশন সার্ভিস’ নামে আলাদা একটি সার্ভিস থাকবে।
এই সংশোধিত আইন কার্যকর হলে ইসি সচিবালয়ের নিজস্ব কর্মকর্তারাও পদোন্নতি পেয়ে সচিব হওয়ার সুযোগ পাবেন। সবমিলিয়ে এই দুটি অধ্যাদেশ জারি হওয়ায় নির্বাচন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা ও স্বাধীনতা অনেকাংশে বাড়ল।
আপনার মতামত লিখুন :