
যশোর প্রতিনিধি: ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপি’র সমাবেশে নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের বর্বরোচিত স্বশস্ত্র হামলার প্রতিবাদে যশোরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে জেলা জামায়াতে ইসলামী।
১৭ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় শহরের দড়াটানা ভৈরব চত্বরে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা আমীর অধ্যাপক গোলাম রসুল। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর দেশে নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়েছিল পতিত স্বৈরাচার আওয়ামীলীগ। তারা দুর্নীতি, লুটপাট খুন, গুম, হামলা, মামলা ও বিনাভোটে ক্ষমতা দখল করে রেখেছিল। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে, তাদের রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচারের পতন হয়েছিল। যে আন্দোলনে আবু সাঈদের মত মানুষ পুলিশের সামনে বুক পেতে দিয়েছিল, বাংলাদেশের মানুষকে নির্যাতন নিস্পেশনের হাত থেকে রক্ষা করতে। তাদের কারণে আজকে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। আমরা কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। জামায়াতে ইসলামী, বিএনপিসহ ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো কথা বলার সুযোগ পেয়েছে। গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেয়েছে।
তিনি বলেন, যারা এনসিপি করছে তাদের নেতৃত্বে আন্দোলনের ফলে দেশটা ফ্যাসিস্টমুক্ত হয়েছে। গোপালগঞ্জে তাদের ওপর যে হামলা হয়েছে তা দেশের মানুষ মেনে নেবে না। জামায়াতে ইসলামী এই ন্যাক্কারজনক হামলা মেনে নিবে না। যারা এই মামলা করেছে তাদেরকে অতি দ্রæত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার আহবান জানান তিনি।
গোলাম রসুল আরও বলেন, জাতী একটি জাতীয় নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে। জামায়াতে ইসলামী সুস্পষ্টভাবে বলেছে নির্বাচনের আগে লেভেল প্লেইং ফিল্ড করতে হবে। সকল দলের জন্য আইন সমান করতে হবে। মাস্তানদের দৌরাত্ব খর্ব করতে হবে। যারা সন্ত্রাসী-মাস্তান তাদের গ্রেফতার করতে হবে। কালো টাকার দৌরাত্ব চলবে না। ১০টি হোন্ডা ২০টি গুন্ডা দিয়ে কেউ যেন কেন্দ্র দখল করতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।ফ্যাসিবাদের বিচার করতে হবে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাসহ যারা হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে তাদের বিচারের আওতায় এনে ফাঁসি দিতে হবে।
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পিআর পদ্ধতির নির্বাচন জারি করতে হবে। যাতে বাংলাদেশে আর কোন স্বৈরাচারের উত্থান না হয়। ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েও সংবিধান পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাজনৈতিক দল বাংলাদেশে পেয়েছে। কিন্তু পিআর পদ্ধতিতে ৪০ শতাংশ ভোট পেলে ১২০টি আসন যে পাবে সে কখনো দলীয়ভাবে স্বৈরাচার হতে পারবে না। আওয়ামীলীগ ১৬ বছর ধরে অন্য কোন রাজনৈতিক দলের মতামতকে গুরুত্ব দেয়নি। তারা অন্য দলগুলোকে উপহাস ও ঠাট্টা করেছে। পিআর পদ্ধতির নির্বাচন হলে যারা ২ শতাংশ ভোট পাবে তারাও ৬টি সিট পাবে। সংসদ হবে সর্বদলীয়। সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহনে সংসদ হবে প্রানবন্ত।
জুলাই আন্দোলনে যারা জীবন দিয়েছে শহীদ হয়েছে তারা আমাদের গর্বিত সন্তান। জাতীর গর্ব। তারা জীবন দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। আমাদের কথা বলার অধিকার এনে দিয়েছে। তাদের কাছে আমরা ঋনী।
যে সমস্ত রাজনৈতিক দল এনসিপি’র সমালোচনা করছেন তাদের ভেবে দেখতে হবে এই সুযোগে আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসররা, যারা বিভিন্ন জায়গায় ঘাপটি মেরে বসে তারা তৃতীয় পক্ষ হয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। আর যারা আজকে রাজনৈতিকভাবে এনসিপিকে কটাক্ষ করছেন, বাংলাদেশে সংস্কার করতে দেন না। ফ্যাসিবাদের বিচার চান না। আপনাদের কর্মকান্ডের কারণে আবারও যেন অতিতের মত কোন স্বৈরাচারের উত্থান বাংলাদেশে না হয়।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা আবু জাফর সিদ্দিকী, সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা বিলাল হুসাইন, অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম, অফিস সেক্রেটারি নুর-ই-আলা নূর মামুন, প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন বিশ্বাস, শহর নায়েবে আমির মাওলানা ইসমাইল হোসেন, যশোর শহর ছাত্রশিবিরের সভাপতি আহম্মেদ ইব্রাহিম শামীম প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন জেলা জামায়াতের কর্ম পরিষদ সদস্য আবুল হাশিম রেজা।
সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে মণিহার সিনেমা হল চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
আপনার মতামত লিখুন :