গুমের পাঁচ বছরেও খোঁজ না মিললে দায়ী ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড: নতুন অধ্যাদেশ জারি
শাহরিয়ার সীমান্ত
নিউজ প্রকাশের তারিখ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৪৫
স্বপ্নভূমি ডেস্ক : গুমের অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং যাবজ্জীবন সাজার বিধান রেখে 'গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশ, ২০২৫'-এর গেজেট জারির পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। আইনটির কঠোর বিধানকে মানবাধিকার কর্মীরা ও ভুক্তভোগী পরিবারগুলো সাধারণভাবে স্বাগত জানালেও, বিশেষ কিছু ধারা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে চলছে কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
সোমবার (১ নভেম্বর) এই অধ্যাদেশের গেজেট জারি হওয়ার পর, সংশ্লিষ্ট মহলে সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো নিয়ে।
অধ্যাদেশে গুমের সংজ্ঞাকে স্পষ্ট করা এবং দায়ীদের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান থাকায় ভুক্তভোগী পরিবার ও মানবাধিকার কর্মীরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
- মৃত্যুদণ্ড: গুমের কারণে মৃত্যু ঘটলে বা পাঁচ বছর পরেও নিখোঁজ ব্যক্তির খোঁজ না মিললে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধানকে অতীতের বিচারহীনতার সংস্কৃতি ভাঙার একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
- কমান্ডারের দায়: বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা কমান্ডারদের অবহেলা বা সরাসরি অংশগ্রহণের জন্য মূল অপরাধের সমান শাস্তির বিধানকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে, যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
- ট্রাইবুনাল গঠন: জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠনের উদ্যোগ মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তিতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অধ্যাদেশের কিছু ধারা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কনভেনশন এবং স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে বলে উদ্বেগ জানিয়েছে একাধিক মানবাধিকার সংস্থা। বিশেষ করে, গ্রেপ্তারকৃতের অবস্থান গোপন রাখার ধারাটি সমালোচিত হচ্ছে।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করার আগ পর্যন্ত 'রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে' গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির অবস্থান গোপন রাখা যেতে পারে। মানবাধিকার কর্মীদের মতে, এই ধারাটি বিচারবহির্ভূত আটক বা নির্যাতনের সুযোগ তৈরি করতে পারে। এটি ব্যক্তিকে আইনগত সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত করার দ্বার উন্মুক্ত করবে, যা গুম প্রতিরোধের মূল উদ্দেশ্যের পরিপন্থী।
এছাড়াও, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো গুমের আইনের মতো আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান না রাখার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। তাদের মতে, অভিযুক্ত ব্যক্তি পলাতক হলেও তার অনুপস্থিতিতে বিচার সম্পন্ন করার ধারাটি অনুপস্থিত আসামির ন্যায্য বিচার পাওয়ার সুযোগ সীমিত করে দিতে পারে।
আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই অধ্যাদেশটি দেশে গুমের অপরাধকে স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি বিরাট পদক্ষেপ। তবে, গেজেট জারি হলেও আইনটির কার্যকর প্রয়োগ ও কিছু বিতর্কিত ধারার সংশোধন নিয়ে আরও কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তাদের মতে, এটি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা পূরণে প্রথম ধাপ, কিন্তু 'নিরাপত্তার স্বার্থে' অবস্থান গোপন রাখার মতো ধারাগুলো গুমের অপরাধের মূল সংজ্ঞা ও চেতনাকে দুর্বল করে দিতে পারে।
সাধারণ মানুষ এই অধ্যাদেশের কঠোর শাস্তির বিধানকে স্বাগত জানালেও, তারা এর নিরপেক্ষ প্রয়োগ দেখতে চান, যাতে বাহিনীর কোনো সদস্য ক্ষমতার অপব্যবহার করে পার পেয়ে না যায়।
আপনার মতামত লিখুন :