আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, বিজয়ের উষালগ্নে মেধাশূন্য করার ষড়যন্ত্রে নিহত হলেন শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা
শাহরিয়ার সীমান্ত
নিউজ প্রকাশের তারিখ : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৪৮
স্টাফ রিপোর্টার : আজ ১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। এটি দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসের সবচেয়ে মর্মন্তুদ দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে বিজয়ের চূড়ান্ত মুহূর্তে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর এ দেশীয় নরঘাতক রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির সদস্যরা বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার ঘৃণ্য নীলনকশা বাস্তবায়নে মেতে ওঠে বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞে।
নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রামের শেষলগ্নে যখন পুরো দেশ বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, ঠিক তখনই এই নৃশংস নিধনযজ্ঞ সেদিন গোটা জাতিসহ পুরো বিশ্বকেই হতবিহ্বল করে দিয়েছিল।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাত্র দু’দিন আগে, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতের অন্ধকারে ঘাতক চক্র কেবল ঢাকা শহরেই প্রায় দেড়শ বুদ্ধিজীবী ও বিভিন্ন পেশার কৃতী মানুষকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যায়। সান্ধ্য আইনের মধ্যে সেই রাতে তালিকা ধরে ধরে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী-সাহিত্যিক, সংস্কৃতিসেবী ও পদস্থ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের ঘর থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরদিন সকালে ঢাকার মিরপুরের ডোবা-নালা ও রায়েরবাজার ইটখোলাতে বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে থাকতে দেখা যায় অসংখ্য নিথর দেহ। নিহতদের শরীরে বুলেটবিদ্ধ হওয়া এবং অমানুষিক নির্যাতনের ক্ষতচিহ্ন ছিল সুস্পষ্ট। হাত পেছনে বেঁধে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছিল অনেককে। স্বাধীনতার উষালগ্নে স্বজন হারানোর সেই কালরাত্রির কথা জানতে পেরে গোটা জাতি স্থবির হয়ে গিয়েছিল।
১৯৭২ সালে প্রকাশিত সংকলন ও আন্তর্জাতিক সংবাদ সাময়িকীর নিবন্ধ অনুসারে, নিহত শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা মোট ১ হাজার ৭০ জন। মূলত ১০ ডিসেম্বর থেকেই এই ঘৃণ্যতম নিধনযজ্ঞের সূচনা হয় এবং সপ্তাহজুড়ে চলতে থাকে।
বাঙালি জাতির দীর্ঘ মুক্তিসংগ্রামে এই বুদ্ধিজীবীরা মেধা, মনন ও লেখার মাধ্যমে স্বাধীনতার সংগঠকদের প্রেরণা জুগিয়েছেন, মুক্তির পথ দেখিয়েছেন এবং গোটা জাতিকে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে উদ্দীপ্ত করেছেন। স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম যেন কিছুতেই সহ্য হচ্ছিল না স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের।
দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
শোকের আবহে প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর দিবসটি পালিত হয়। আজ দেশের সর্বত্র জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে এবং ওড়ানো হবে শোকের প্রতীক কালো পতাকা।
- শ্রদ্ধার্ঘ্য: রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরা এবং যুদ্ধাহত ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা সকালে মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এবং রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর সর্বস্তরের মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
- স্মৃতিসৌধ: শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ঢাকার মিরপুরে প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়। ১৯৯৯ সালে ১৪ ডিসেম্বর ঢাকার রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ উদ্বোধন করা হয়।
- বিশেষ আয়োজন: দেশব্যাপী বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশে আলোচনা সভা, গান, আবৃত্তি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, স্বেচ্ছায় রক্তদানসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনসহ বেসরকারি চ্যানেলগুলো দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে এবং সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করবে বিশেষ ক্রোড়পত্র।
এছাড়াও, সব উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :