
সাইবার স্পেস-সহ আওয়াামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্র্বতীকালীন সরকার। শনিবার এই সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে প্রযোজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিবৃতিতে জানায়, আজ উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে।
সংশোধনী অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গ সংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে।
"উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেস-সহ আওয়ামী লীগ এর যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে," বলা হয় বিবৃতিতে।
আরো জানানো হয়েছে, আজকের (শনিবার) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জুলাই ঘোষণাপত্র আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, তিনিও একই বিবৃতি পড়ে শোনান। তিনি জানান, পরবর্তী কর্মদিবসে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সংক্রান্ত প্রযোজনীয় পরিপত্র জারি করা হবে।
আওয়ামী লীগকে 'সন্ত্রাসী সংগঠন' হিসেবে নিষিদ্ধের দাবিতে গত দুই দিন ধরে ঢাকায় আন্দোলন করছিল জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি-সহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন।
প্রথমে কর্মসূচির ডাক দেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেন তিনিসহ অনেকে।
পরে বিভিন্ন ছাত্র ও রাজনৈতিক সংগঠন এই কর্মসূচির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে।
পরবর্তীতে শুক্রবার বিকেল থেকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান চলছে। শনিবার বিকেল তিনটার দিকে শাহবাগে গণজমায়েত কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। এই কর্মসূচিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি, ইসলামী ছাত্র শিবির, ইসলামী আন্দোলন, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ বা আপ বাংলাদেশসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
শনিবার রাতে অন্তর্বতী সরকারের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত আসার পর শাহবাগে জড়ো হওয়া ব্যক্তিদের উল্লাস করতে দেখা গেছে।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ফেসবুকে এক পোস্টে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন দ্রুত সময়ের মধ্যে বাতিল করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত অগাস্টে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের বেশি সময়ের শাসনের পতন হয়। এর পর থেকে বিভিন্ন সময় দলটি নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি তুলেছে বিভিন্ন পক্ষ।
বিশেষ করে করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি গত ফেব্রুয়ারিতে আত্মপ্রকাশের পর থেকেই এই দাবি জানিয়ে আসছে।
জুলাই আন্দোলনের হত্যাকান্ডসহ বিভিন্ন অপরাধের বিচার ও তার দায়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছে তারা।
গত বুধবার মধ্যরাতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সময়ের সাবেক রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদ থাইল্যান্ড যান। তার দেশ ছাড়ার ঘটনার বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার দিনভর সামাজিক মাধ্যমে নানা রকম বক্তব্য তুলে ধরতে দেখা যায় এনসিপি'র নেতাদের।
এরপর বৃহস্পতিবার মধ্য রাতেই এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহকে কয়েকশ নেতা-কর্মী নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অবস্থান নিতে দেখা যায়। পরে গভীর রাতে সেই অবস্থান কর্মসূচিতে এনসিপির শীর্ষ নেতারা এবং ইসলামপন্থি বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীরা যোগ দেন।
আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বিএনপিকে এই আন্দোলনে যোগ দেয়ার আহ্বান জানালেও দলটি তাতে সাড়া দেয়নি।
দলের একজন সিনিয়র নেতা শুক্রবার বলেছেন- 'আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়টি সরকার, নির্বাচন কমিশন ও জনগণের বিষয়' বলে তার দল মনে করে।
এর আগে গত ২৩শে অক্টোবর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল অন্তর্র্বতীকালীন সরকার।
এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে সরকারকে আলটিমেটাম দেয়া হয়েছিল যেন, ২৪শে অক্টোবরের মধ্যে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ অনুযায়ী ক্ষমতাবলে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো এবং ওই আইনের তফসিল-২ অনুযায়ী বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হলো।
সরকারের ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ''যেহেতু বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করিয়া বিগত ১৫ বৎসরের স্বৈরাচারী মাসনামলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হত্যা, নির্যাতন, গণরুম কেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজী, ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নসহ নানাবিধ জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকান্ডে জড়িত ছিল এবং এ সম্পর্কিত প্রামাণ্য তথ্য দেশের সকল গণমাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে এভং কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের অপরাধ আদালতেও প্রমাণিত হইয়াছে,''
''যেহেতু ১৫ জুলাই ২০২৪ তারিখ হইতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ জনগণকে উম্মক্ত ও বেপরোয়া সশস্ত্র আক্রমণ করিয়া শত শত নিরপরাধ শিক্ষার্থী ও ব্যক্তিদের হত্যা করিয়াছে এবং আরো অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন করিয়াছে; এবং''
যেহেতু সরকারের নিকট যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রহিয়াছে যে, পাঁচ অগাস্ট ২০২৪ তারিখ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক ও উস্কানিমূলক কর্মকান্ড এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যের সাথে জড়িত রহিয়াছে;''
এসব কারণে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়।
এছাড়া গত বৃহস্পতিবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে অন্তর্র্বতী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া জানান, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বিষয়টি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।
সুত্র: বিবিসি
আপনার মতামত লিখুন :