• ঢাকা
  • | বঙ্গাব্দ
Techogram

জুলাই গণঅভ্যুত্থান গণহত্যায় শেখ হাসিনা ও কামালের চরম দণ্ড চাইল রাষ্ট্রপক্ষ!


FavIcon
শাহরিয়ার সীমান্ত
নিউজ প্রকাশের তারিখ : Oct 16, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন: ad728

স্বপ্নভূমি ডেস্ক : জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক শেষ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। টানা পাঁচদিনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের জন্য চরম দণ্ড (মৃত্যুদণ্ড) চেয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছে।

আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেলে এই চাঞ্চল্যকর আবেদন জানান তিনি। একইসঙ্গে, মামলার রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের শাস্তির বিষয়টি আদালতের বিবেচনার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

"১৪০০ বার ফাঁসি দিতে হবে..."
ট্রাইব্যুনালকে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, "জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ১৪০০ ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়েছে। একজন মানুষকে হত্যার জন্য যদি একবার মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, তাহলে ১৪০০ মানুষকে হত্যার দায়ে শেখ হাসিনাকে ১৪০০ বার ফাঁসি দিতে হবে। কিন্তু আইনে এটা সম্ভব নয়। এজন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আমরা তার চরম দণ্ড দেওয়ার জন্য আবেদন করছি। যদি তাকে এ দণ্ড দেওয়া হয় তাহলে ন্যায়বিচার পাবে দেশের জনগণ।"

শেখ হাসিনা 'হার্ডনট ক্রিমিনাল', 'সব অপরাধীর প্রাণভোমরা'
পরে প্রেস ব্রিফিংয়ে তাজুল ইসলাম আরও বলেন, "বাংলাদেশ থেকে অপরাধ সংঘটনের পর পালিয়ে গেলেও ভারত থেকে ক্রমাগত আন্দোলনকারীদের হত্যার হুমকি দিয়েছেন শেখ হাসিনা। যারা বিচার চেয়ে মামলা করেছেন তাদেরও নির্মূলের কথা বলেছেন, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। এতে বোঝা যাচ্ছে যে এত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করার পরও তার মধ্যে ন্যূনতম অনুশোচনা নেই। তিনি একজন হার্ডনট ক্রিমিনালের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।"

তিনি জোর দিয়ে বলেন, "এই ট্রাইব্যুনালের মামলায় তিনি যেহেতু সব অপরাধীদের প্রাণভোমরা ছিলেন, তাই তাকে আইনানুযায়ী চরম দণ্ড দেওয়া শ্রেয়। তাকে যদি চরম দণ্ড না দেওয়া হয় এটা অবিচার করা হবে।"

কামাল 'গ্যাং অফ ফোরে'র সদস্য', হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সম্পর্কে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, "তিনি 'গ্যাং অফ ফোরে’র সদস্য ছিলেন। তার বাসায় বসে এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ড্রোন ওড়ানোসহ হেলিকপ্টার থেকে মারণাস্ত্র ছোড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি নিজে গ্রাউন্ডে গিয়ে গিয়ে দেখেছেন সঠিকভাবে হত্যা করা হচ্ছে কি না। তাকে ভিডিও দেখানো হয়েছে। তিনি কমান্ড স্ট্রাকচারে দ্বিতীয় পজিশনে ছিলেন। এ কারণে তার ব্যাপারেও চরম দণ্ড চেয়েছি ট্রাইব্যুনালে।"

ক্ষতিপূরণের আবেদন
রাষ্ট্রপক্ষ আদালতের কাছে আরও আবেদন করেছে যে, যারা শহীদ ও আহত হয়েছেন, তারা হয়তো পরিবারের আলোর প্রদীপ ছিলেন। ভবিষ্যতে পরিবারের দায়িত্ব নিতেন তারা। সুতরাং এসব পরিবারের ক্ষতিপূরণের জন্য আসামিদের সম্পদ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত বলে আদালতের কাছে আদেশ চাওয়া হয়েছে।

পাঁচদিনের যুক্তিতর্কে যা ঘটল
  • তথ্য-উপাত্ত পেশ: টানা পাঁচদিন ধরে (১২ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে আজ পর্যন্ত) চিফ প্রসিকিউটর নানা তথ্য-উপাত্ত ও প্রমাণাদি তুলে ধরেছেন।
  • ফোনালাপ ও ভিডিও প্রদর্শন: যুক্তিতর্কের সময় শেখ হাসিনার সঙ্গে হাসানুল হক ইনু, শেখ ফজলে নূর তাপসের কথোপকথনসহ কয়েকটি ফোনালাপ বাজিয়ে শোনানো হয়। এছাড়া, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের বিভিন্ন তথ্যচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
  • সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন: এর আগে মোট ২৮ কার্যদিবসে এ মামলায় ৫৪ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছিল। গত ৮ অক্টোবর মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরকে জেরা শেষ করেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী।

উল্লেখ্য, গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।