স্বপ্নভূমি ডেস্ক : জুলাই সনদ, গণভোট ও বিচার নিয়ে ইউনূসের সঙ্গে এনসিপি ও জামায়াত নেতাদের বৈঠক

আগামী সাধারণ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি, গণভোটের সময় এবং জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা করতে বুধবার (২২ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে পৃথকভাবে সাক্ষাৎ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জামায়াতে ইসলামীর নেতারা।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক বার্তায় বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস উভয় রাজনৈতিক দলকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, "আগামী জাতীয় নির্বাচনকে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু করার স্বার্থে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।"

তিনি জামায়াত ও এনসিপিসহ সব সক্রিয় রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, "আমাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে আপনারা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে ইতোমধ্যে নানা পদক্ষেপ নিয়েছি; সামনে আরও অনেক উদ্যোগ দেখতে পাবেন।" প্রধান উপদেষ্টা জানান, নির্বাচনের আগে প্রশাসনের যেকোনো রদবদল তিনি নিজেই সরাসরি তদারকি করবেন এবং নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।

এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধিদল প্রথমে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে। নাহিদ ইসলাম বৈঠকে বলেন, "নির্বাচনের আগে আমরা জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের রোডম্যাপ ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা চাই। এ বিষয়ে সরকারকে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।"

প্রধান উপদেষ্টা এনসিপিকে জুলাই সনদে স্বাক্ষরের আহ্বান জানিয়ে বলেন, "এই সনদ জাতির জন্য মহামূল্যবান সম্পদ; এখানে সবার অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ।" তিনি এনসিপিকে আশ্বস্ত করেন যে সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ করছে। জবাবে নাহিদ ইসলাম জানান, ঐকমত্য কমিশনের আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার জন্য এনসিপির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এনসিপির প্রতিনিধিদলে ছিলেন— দলের উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামন্তা শারমিন ও যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ।

এনসিপির বৈঠকের পর জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ তাহেরের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। জামায়াত নেতৃবৃন্দ জাতীয় নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদের ওপর গণভোটের দাবি জানিয়েছেন।

ডা. আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, "জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট হওয়া প্রয়োজন। কারণ জুলাই সনদে এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যা জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত।" তিনি মনে করেন, জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে গণভোট অনুষ্ঠিত হলে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। দলটির নেতারা প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক গৃহীত যেকোনো সিদ্ধান্তের প্রতি পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করেন।

জামায়াতের প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা ছিলেন— সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ. টি. এম. মা‘ছুম এবং রফিকুল ইসলাম খান।

সরকারের পক্ষে উভয় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।