প্রিন্ট এর তারিখঃ Dec 7, 2025 ইং || প্রকাশের তারিখঃ 07 December 2025, 04:46 ইং
জোটেনি বীর নিবাস, মুক্তিযোদ্ধার ঠাঁই আশ্রয়ণের ঘরে

মনিরামপুর প্রতিনিধি :
যশোরের মনিরামপুরের হরিহরনগর ইউনিয়নের বাসিন্দা আরশাদ আলী (৭৫)। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যিনি শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করে দেশ স্বাধীন করেছেন। জীবনের শেষ পর্যায়ে স্বাধীন দেশে সেই আরশাদ আলীর ঠাঁই হয়েছে আশ্রয়ণের ঘরে। তাও আবার নিজের নামে নয়। অন্যের নামে বরাদ্দ হওয়া ঘরে মানবেতর জীবন এই বীর সংগ্রামীর।
মনিরামপুরে সম্প্রতি দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩৪টি বীর নিবাস নির্মিত হয়েছে। তিন তিনবার আবেদন করেও আরশাদ আলীর নাম সেই তালিকায় ঠাঁই পায়নি। ভাগ্যে জোটেনি বীর নিবাস। অথচ পৌরশহরে তিনতলা বাড়ি ও ঢাকা শহরে নিজের নামে থাকা ফ্লাটের মালিক মনিরামপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আলাউদ্দিনের নামে বীর নিবাস বরাদ্দ দিয়েছে উপজেলা বাছাই কমিটি। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি বেশ সমালোচনা তৈরি হয়। এরপর আলাউদ্দিনের নামের বীর নিবাস নির্মাণ কাজ থেকে পিছিয়ে আসেন সংশ্লিষ্টরা।
মুক্তিযোদ্ধা আরশাদ আলী বলেন, ১৯৭১ সালে ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে খুলনার বটিয়াঘাটা ও বয়রাসহ কয়েকটি অঞ্চলে যুদ্ধ করেছি। দেশ মুক্ত হওয়ার পর মনিরামপুরের হরিহরনগর ইউনিয়নে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন তিনি। মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করে চালিয়েছেন সংসার।
মধু বিক্রির আয়ে স্ত্রী ও ছয় ছেলেকে নিয়ে মনিরামপুরের গোয়ালবাড়ি এলাকায় আট শতক জমি কিনে বসতঘর করে থাকতাম। পরবর্তীতে আমার বসতভিটা খাস হয়ে যায়। ২০২৩ সালে সরকার আমার জমি দখলে নিয়ে বসতঘর ভেঙ্গে আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণ করে। যারমধ্যে দুটি ঘর আমার দুই ছেলে বরাদ্দ পেয়েছেন। একটি ঘর পেয়েছেন আমার এক ছেলের শাশুড়ি। তিনি এখানে থাকেন না। সেই ঘরটাতে আমি উঠেছি।
আরশাদ আলী বলেন, আমার স্ত্রী মারা গেছেন দুই-তিন বছর আগে। ছয় ছেলেকে কষ্টে বড় করেছি। বসতভিটা করে দিতে পারিনি বলে ওরা ভিন্ন ভিন্ন স্থানে বসবাস করে।
বীর এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ২০১৬ সালে ভাতার তালিকায় নাম ওঠে। এখন ২০ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা পাই। এক ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর উদ্দেশে ১০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে দালালের হাতে দিছি। সেই টাকা খোয়া গেছে। এখন লোনের টাকার কিস্তি দিয়ে মাসে ছয় হাজার টাকা হাতে পাই। বয়স হয়েছে। এখর মধুও তেমন পাওয়া যায় না। ভাতার ছয় হাজার টাকা দিয়ে কোন রকম চলে যাচ্ছে।
আরশাদ আলী বলেন, কষ্ট করে গোয়ালবাড়ি মৌজায় আরও ৮ শতক জমি কিনেছি। কিন্তু ঘর তুলতে পারিনি। বীর নিবাসের জন্য আগেও দুই বার আবেদন করে লাভ হয়নি। নতুন করে আবার আবেদন দিছি। সরকার যদি আমার আবেদনে সাড়া দেন তাহলে শেষ বয়সে এসে নিজের ঘরে স্বস্তিতো একটু থাকতে পারতাম।
সাড়ে ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বীর নিবাস নির্মাণের একটি প্রকল্প হাতে নেয় বিগত সরকার। সেই প্রকল্পের আওতায় মনিরামপুরে ইতিমধ্যে ৩৪টি ঘর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। সম্প্রতি নতুন পাঁচটি ঘর নির্মাণের বরাদ্দ এসেছে। যারমধ্যে চারটির নির্মাণ কাজ চলমান আছে।
বীর নিবাস নির্মাণ কমিটির সদস্য সচিব ও
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, নতুন করে ৫টি বীর নিবাসের বরাদ্দ এসেছে। তারমধ্যে ৪টির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। শেষ কিস্তিতে বরাদ্দ আসা বাড়িগুলোর মধ্যে একটি বরাদ্দ হয়েছে সাবেক উপজেলা কমান্ডার আলাউদ্দিনের নামে। তিনি লিখিতভাবে ঘর না নেওয়ার বিষয়টি আমাদের জানিয়েছেন। এজন্য তার ঘর নির্মাণ কাজ চালু হয়নি।
আলমগীর হোসেন আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধা আরশাদ আলী বীর রিবাস পাওয়ার জন্য একটি আবেদন দিয়েছেন। আলাউদ্দিনের নামের বরাদ্দের ঘরটি আরশাদ আলীর নামে বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে যাচাই বাছাই চলছে।
মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সম্রাট হোসেন বলেন, আমি নতুন এসেছি। মুক্তিযোদ্ধা আরশাদ আলীর বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে তার নামে বীর নিবাস বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
© সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ স্বপ্নভূমি নিউজ