প্রিন্ট এর তারিখঃ Dec 7, 2025 ইং || প্রকাশের তারিখঃ 07 December 2025, 04:46 ইং
বিজয়ের প্রবেশদ্বার যশোর, আজ ৬ ডিসেম্বরে প্রথম উড়েছিল বিজয়ের লাল-সবুজ পতাকা

স্টাফ রিপোর্টার : গৌরব ও আত্মত্যাগের এক অনন্য দিন আজ ৬ ডিসেম্বর, যশোর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যশোর সেনানিবাস ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। এই দিনেই শত্রুমুক্ত হয় দেশের প্রথম মুক্ত জেলা যশোর, আর আকাশে ওড়ে বাঙালির স্বপ্নের বিজয়ী পতাকা।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বিএলএফ মুজিব বাহিনীর বৃহত্তর যশোর জেলার উপ-অধিনায়ক রবিউল আলম স্মরণ করে বলেন, ৩, ৪ এবং ৫ ডিসেম্বর যশোর অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে পাক হানাদারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মিত্রবাহিনীর সমন্বিত আক্রমণে যশোর সেনানিবাসসহ পাকিস্তানি আর্মিদের বিভিন্ন স্থাপনায় ব্যাপক হামলা চলতে থাকে। এক পর্যায়ে পর্যদুস্ত পাক বাহিনী ৫ ডিসেম্বর থেকেই পলায়ন শুরু করে। যশোর সেনানিবাস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তারা খুলনার গিলাতলা সেনানিবাসের দিকে পালাতে থাকে।
তবে পালানোর সময়েও পাক বাহিনী রেহাই পায়নি। ৫ ও ৬ ডিসেম্বর রাজারহাটসহ বিভিন্ন স্থানে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে তাদের প্রচণ্ড লড়াই হয়। অবশেষে ৬ ডিসেম্বর বিকেলের আগেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যশোর সেনানিবাস সম্পূর্ণ খালি করে পালিয়ে যায়। বিকেলে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সদস্যরা বিজয়ীর বেশে সেনানিবাসে প্রবেশ করলে মুক্তির আনন্দে উচ্ছ্বসিত মুক্তিযোদ্ধা-জনতার ঢল নামে শহরে। 'জয় বাংলা' স্লোগানে মুখরিত হয় মুক্ত যশোরের পাড়া-মহল্লা।
যশোরে প্রতিরোধ আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল রক্ত দিয়ে। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ যশোর শহরে মুক্তিকামী জনতার মিছিলে পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন চারুবালা কর। স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনিই প্রথম শহীদ। এর পরই ছাত্র, যুবক ও মহিলাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী প্রতিরোধের আন্দোলনকে সংগঠিত করে সংগ্রাম পরিষদ।
এর মাঝেই ঘটে আরও নৃশংসতা। ২৬ মার্চ পাকিস্তানি জল্লাদ বাহিনী তদানীন্তন জাতীয় সংসদ সদস্য মশিয়ুর রহমানকে তার বাসভবন থেকে ধরে যশোর সেনানিবাসে নিয়ে হত্যা করে। ৩০ মার্চ যশোর সেনানিবাসে বাঙালি সৈনিকদের বিদ্রোহে লেফটেন্যান্ট আনোয়ারসহ অনেকেই শহীদ হন। এরপর ৩০ ও ৩১ মার্চ মুক্তিকামী জনতা যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে হামলা চালিয়ে সকল রাজবন্দীকে মুক্ত করে।
যশোর অঞ্চল ছিল ৮নং সেক্টরের অধীনে, যার প্রথম কমান্ডার ছিলেন কর্নেল আবু ওসমান চৌধুরী এবং পরে মেজর মঞ্জুর নিযুক্ত হন। এই সেক্টরের অধীনেই যুদ্ধের গতিধারা পাল্টে যায় জুলাই মাস থেকে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা যশোর শহর ও অন্যান্য পাকিস্তানি অবস্থানগুলোতে প্রচণ্ড আক্রমণ শুরু করেন।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর সীমান্তের বয়রা অঞ্চলে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ৫ সেপ্টেম্বর শহীদ হন বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ। যশোর সেনানিবাসের তিনদিকেই যখন মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী শক্ত ঘাঁটি গেড়ে বসে, তখন ২০ নভেম্বর সম্মিলিত বাহিনী সেনানিবাস দখলে চূড়ান্ত অভিযান শুরু করে। জগন্নাথপুর ও সিংহঝুলির যুদ্ধের পর ২২ নভেম্বর রাতে চৌগাছা শত্রুমুক্ত হয়, যা পাকিস্তানি বাহিনীর মনোবল ভেঙে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এই গৌরবোজ্জ্বল দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য জেলা প্রশাসন ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে আজ (৬ ডিসেম্বর) টাউন হল ময়দানে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টায় ৫০ জন শিল্পীর পরিবেশনায় গণসংগীত 'জয় বাংলা, বাংলার জয়' পরিবেশন করা হবে। এরপর জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে ৫০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবেন। এছাড়াও, শহরে বর্ণিল শোভাযাত্রা ও বঙ্গবন্ধু ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে।
© সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ স্বপ্নভূমি নিউজ