
বেনাপোল প্রতিনিধি : বেনাপোল স্থলবন্দরের অভ্যন্তরে অবৈধ পণ্যচালান পাচার ও চাঁদাবাজির ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় ছয়জন আনসার সদস্য ও দুইজন প্লাটুন কমান্ডারের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে তাদের বায়োমেট্রিক হাজিরাও স্থগিত করা হয়েছে।
বুধবার (১৫ অক্টোবর ২০২৫) বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) ও উপসচিব মোঃ শামীম হোসেন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ নির্দেশনা জারি করা হয় (স্মারক নং: ১৮.১৫.৪১৯০.০২৫.০০.২৫৯(২).২৪.৮-৬৫)।
অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে বেনাপোল পৌর এলাকার ভবেরভেড় ট্রাক টার্মিনালের সামনে থেকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) একটি বাংলাদেশি ট্রাক (নং: ঢাকা-মেট্রো-ট-২২-৭৫৬৬) থেকে বিপুল পরিমাণ অবৈধ পণ্যচালান আটক করে।
ঘটনার পর ২৩ সেপ্টেম্বর বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের কার্যালয় থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে দেখা যায়, ওইদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বন্দরের কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল গেইট, গেইট নম্বর-০৯, ১০, ১১ এবং ছোট আচড়া মোড় গেইটে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা অবৈধ পণ্য পাচারের ঘটনায় জড়িত ছিলেন।
অভিযুক্ত আনসার সদস্যরা হলেন- নাজমুল হক (আইডি নং ৬৩৭৩৪), কৃষ্ণ কুমার দাস (আইডি নং ৭৭১৫৬), আনন্দ কুমার দাস (আইডি নং ৪৫০৭৭) ও মোঃ রাসেল শেখ (আইডি নং ০৫৯০০)।
এছাড়া প্লাটুন কমান্ডার-১ শ্রী অসিতকুমার বিশ্বাস (আইডি নং ৫৩২৭৮) এবং প্লাটুন কমান্ডার-২ মোঃ ইয়ামিন কবীর (আইডি নং ৩৪০৮৯)-কেও একই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত পাওয়া গেছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, বেনাপোল স্থলবন্দর একটি কেপিআই হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হওয়া সত্ত্বেও, এই আনসার সদস্য ও কমান্ডাররা বন্দরের বিভিন্ন গেইট ও ইয়ার্ড এলাকায় অবৈধ চাঁদা বা মাসোহারা উত্তোলনের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন।
তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট আনসার সদস্যদের অনতিবিলম্বে বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে প্রত্যাহার এবং তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
পরিচালক (ট্রাফিক) মোঃ শামীম হোসেন স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বলা হয়, বর্ণিত ব্যক্তিগণ যাতে বেনাপোল স্থলবন্দরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে না পারেন, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৫ অক্টোবর থেকে তাদের বায়োমেট্রিক হাজিরা স্থগিত করা হয় এবং বন্দরের সকল গেইটে তাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
এই নির্দেশনার অনুলিপি বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন শাখা, যশোর জেলা আনসার কমান্ড্যান্ট, বেনাপোল স্থলবন্দর উপপরিচালক (ট্রাফিক ও প্রশাসন) ও নিরাপত্তা শাখাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।
স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের প্রত্যাহারের পর আনসার ক্যাম্প ও বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা আল আরাফাত সার্ভিসেস লিমিটেড-এর বিকল্প সদস্যদের মাধ্যমে নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে কথা হয় বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) মোঃ শামীম হোসেনের সাথে। তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে স্থলবন্দরের নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও শক্তিশালী হবে। ভবিষ্যতে যেন কেউ দায়িত্বের অপব্যবহার করতে না পারে, সে জন্য তদারকি আরও জোরদার করা হচ্ছে।