
স্বপ্নভূমি ডেস্ক: ভারতের গেট খুলে দেওয়ায় ভয়াবহ পরিস্থিতি; ৫ জেলায় বিপৎসীমার উপরে নদীর পানি!!!
লালমনিরহাট, নীলফামারি, রংপুর (বাংলাদেশ): মধ্যরাতে তিস্তা নদীর পানির ভয়াবহ তাণ্ডবে দুকূলের চরাঞ্চল ও নিম্নঞ্চলের হাজারো বসতবাড়ি হুহু করে তলিয়ে যাচ্ছে। রাতারাতি কোমর পর্যন্ত পানি উঠে যাওয়ায় মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন। তলিয়ে গেছে আমন ধানসহ শাকসবজির আবাদ, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।
ভারতের গাজলডোবা গেটের সবকটি গেট খুলে দেওয়া এবং লাগাতার ভারী বৃষ্টির কারণে উজানের পানি প্রবল বেগে বাংলাদেশের ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে আছড়ে পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসন তিস্তা অববাহিকায় ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করেছে।
বাঁধ উপচে পড়ছে পানি, রেড অ্যালার্ট জারি
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা জানান, ডালিয়া ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাটই খুলে দেওয়া হয়েছে। এতৎসত্ত্বেও পানির স্রোত সামলানো যাচ্ছে না। ব্যারাজের পূর্ব পার্শ্বে ফ্লাড বাইপাসের উপর দিয়েও তিস্তার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন যে, যেকোনো মুহূর্তে বাইপাসটি কেটে দিয়ে নদীর গতিপথ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে হতে পারে।
পাউবোর উত্তরাঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব নিশ্চিত করেছেন, উজানে পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমে অতি ভারী বৃষ্টির কারণেই এই পরিস্থিতি। তিনি বলেন, “ফ্ল্যাট বাইপাসটি কেটে দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে মাইকিং করে তিস্তা অববাহিকার মানুষদের নিরাপদে আশ্রয়ে চলে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।”
৫ জেলায় বিপৎসীমা অতিক্রম, প্রশাসনের তৎপরতা
প্রকৌশলী আহসান হাবিব আরও জানান, তিস্তার পাশাপাশি ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানিও বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এর ফলে লালমনিরহাট, নীলফামারি, রংপুর, কুড়িগ্রাম সহ মোট ৫ জেলার নদীসংলগ্ন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, পাঁচ জেলার জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে মাইকিং করে এলাকাবাসীকে সতর্ক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পানিবন্দি মানুষদের দ্রুত উঁচু স্থানে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার জন্য বোর্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও, পানিবন্দি মানুষদের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
২৪ ঘণ্টায় আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস
আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ে ২৬১ মিলিমিটার, কোচবিহারে ১৯০ মিলিমিটার এবং জলপাইগুড়িতে ১৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টায় উজানে ভারতসহ রংপুর বিভাগে ভারিসহ অতি ভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পূর্বাভাস বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তোলার আশঙ্কা বাড়াচ্ছে।