
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া বক্তব্য দেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তাঁর ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের সুস্পষ্ট অবস্থানের পর সফরসঙ্গী বিএনপি, জামায়াত, এবং এনসিপি নেতাদের পক্ষ থেকে এসেছে ইতিবাচক সাড়া, যা দেশের সংস্কার ও নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে চলমান অচলাবস্থা কাটানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নিয়ে কাটল সংশয়-
দেশে যখন নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে সংশয় সৃষ্টি হয়েছিল, ঠিক তখনই নিউইয়র্কে সরকারপ্রধানের বক্তব্য আশ্বাস এনে দিয়েছে। সফরসঙ্গী রাজনৈতিক নেতারা এখন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, "প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পর ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ব্যাপারে আমরা কনভিন্সড হয়েছি। এখন আমাদের আর কোনো রকম সংশয় নেই।"
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের নিশ্চিত করেছেন, "ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।"
নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন জানান, "ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের যে সময়সীমার কথা বলা হয়েছে, সেটাকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখি। আমরা আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি, পাশাপাশি সংস্কারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।"
বিশ্লেষকদের চোখে ড. ইউনূসের ভূমিকা
বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে এক মঞ্চে আনার ক্ষেত্রে ড. ইউনূসের নিউইয়র্ক সফর এবং সেখানে প্রায় অভিন্ন অবস্থান গ্রহণ আগামী দিনে নির্বাচনী রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ মনে করেন, "যারা রাজনীতি করেন, তাদের তো নিশ্চয়ই ওই ধরনের ম্যাচিউরিটি আছে যে আমরা সব কিছু নিজেদের মতো চাইলেই তো হবে না। মনে হচ্ছে, বিদেশে গিয়ে সবার মধ্যেই একটা পরিবর্তন এসেছে।"
তিনি আরও বলেন, বিদেশে প্রধান উপদেষ্টা ব্যক্তিগতভাবে তাদের সঙ্গে কথা বলে একটি ঐকমত্যের জায়গায় নিয়ে আসতে পেরেছেন। এর ফলস্বরূপ, "সবাই নির্বাচনের লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়বে। কোয়ালিশন করা, এলাইয়েন্স করা হয়ত দেশে আসার পরেই শুরু হবে," যা নির্বাচনী রাজনীতির জন্য ইতিবাচক।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির আহ্বান
নির্বাচনী রাজনীতির পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে উল্লেখযোগ্য অংশজুড়েই ছিল রোহিঙ্গা ইস্যু। তিনি এর রাজনৈতিক সমাধানে মিয়ানমার সরকার ও রাখাইনের অন্যান্য অংশীজনদের ওপর চাপ প্রয়োগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই আহ্বান রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে।
এদিকে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ৩০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলনে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে তহবিল সংগ্রহ। এছাড়াও রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিকভাবে একটি রোডম্যাপও গৃহীত হওয়ার কথা রয়েছে।