প্রিন্ট এর তারিখঃ Oct 15, 2025 ইং || প্রকাশের তারিখঃ Sep 29, 2025 ইং
কার্যক্রম বন্ধ ১০ বছর, অফিস জরাজীর্ণ, তবুও নির্বাচন পর্যবেক্ষকের তালিকায় মনিরামপুরের 'সিড'

মনিরামপুর প্রতিনিধি : :
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য প্রাথমিকভাবে দেশীয় ৭৩ সংস্থার তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তালিকায় যশোরের মনিরামপুরের সার্ভিসেস ফর ইকুয়িটি অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টের (সিড) নাম রয়েছে। তালিকায় ২৫ নম্বর স্থানে রয়েছে সিড সংস্থাটির নাম। যার প্রধান কার্যালয় উপজেলার দিঘীরপাড় বাজারে।
নির্বাচন কমিশনের তালিকা পেয়ে রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) সরেজমিন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দিঘীরপাড় বাজারের এক মাথায় পাকা রাস্তার পাশে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে টিনের চালার একটি ভাঙ্গা ঘর। যার চারপাশে ঝোপঝাড়ে ঘেরা। একটি কক্ষের চালায় ভিমরুল বড় একটি বাসা করেছে। যেখানে উড়ে এসে বসছে ভিমরুল। অপর একটি কক্ষে কাঠের ভাঙ্গাচুরা পুরোন আসবাবপত্র পড়ে আছে। যাতে ধুলোবালির স্তর জমেছে। যেখানে সিডের কোন কার্যক্রম চলে না বহু বছর।
নির্বাচন কমিশনের তালিকায় জন এস বিশ্বাস নামের সিডের যে প্রধান নির্বাহীর নাম দেওয়া আছে, তাঁকে স্থানীয়রা কেউ চেনেন না, এলাকায় কখনো কেউ দেখেনি। স্থানীয়রা বলছেন, দীঘিরপাড় বাজারের পূ্র্বমাথায় ৩০-৩৫ বছর আগে গ্রামে একটি সমিতি ছিল। সেই সমিতি দুই ভাগ হয়ে যাওয়ায় আকবার হোসেন নামের এক ব্যক্তি সিড এনজিওটি খোলেন। শুরুতে বেশ জমজমাট চলছিল। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ২০০৭ সালের দিকে সমিতির পরিচালক আকবরের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী রেবেকা সুলতানা এর দায়িত্ব নেন। এর পরপরই লোকজন অফিস ছেড়ে চলে যেতে শুরু করে। কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। আকবারের স্ত্রী ও ছেলে তখন ঢাকায় চলে যান। তারা এখন সেখানে থাকেন। ১০-১২ বছর ধরে সিডের এই অফিস পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। জমি দখলে রাখার জন্য নামে মাত্র একটা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। সেটাও এখন আর নেই।
সিডের নির্বাহী পরিচালক রেবেকা সুলতানা। তার বাবার বাড়ি দীঘিরপাড় বাজারের পাশে। রেবেকা সুলতানার বাবা শহর আলী মোড়ল বলেন, জামাই আকবার আলী দীঘিরপাড় বাজারে জমি কিনে এনজিও খুলে মানুষজনকে ঋণ দিতেন। প্রথমদিকে ১৫-১৬ কর্মচারী ছিল। বিদেশ থেকে টাকা আসতে শুরু করে। ২০০০ সালের দিকে জামাই মোটরসাইকেল এক্সিডেন্ট করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন সবাই অফিস ছেড়ে চলে যেতে লাগলেন। ২০০৭ সালের দিকে জামাই মারা যাওয়ার পর আমার মেয়ে রেবেকা সুলতানা এনজিওর দায়িত্ব নেয়। এরপর নতুন ভবন করতে চাইলে স্থানীয় কয়েক জনের সাথে জমিরা মালিকানা দ্বন্দ্বে সমিতি বন্ধ হয়ে যায়। ফিরে যায় বিদেশের সহযোগিতা। এরপর আমার মেয়ে তার ছেলেকে নিয়ে ঢাকা চলে যায়। সেখানে অফিস নিয়ে সমিতির কাজ চালাচ্ছে আমার মেয়ে। এখনো সমিতির নামে নানা চিঠি আসে গ্রামের ঠিকানায়। আমরা সেই চিঠি মোবাইলে মেয়েকে পাঠিয়ে দিই।
স্থানীয়রা বলছেন, সমিতির কোন কাজ এখানে চলে না। সিডের নির্বাহী পরিচালক রেবেকা সুলতানার কাগজে কলমে যাদের কমিটিতে যুক্ত করেছেন, তাঁরা রেবেকা সুলতানার আত্মীয়স্বজন।
দীর্ঘদিন কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও এরআগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পেয়েছিল রেবেকা সুলতানার সংস্থা সিড। তখন সরেজমিন দীঘিরপাড় বাজারে গিয়ে জরাজীর্ণ ভবনের পাশে সিডের একটি সাইনবোর্ড পাওয়া গিয়েছিল। যা নিয়ে তখন সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। তবে বর্তমানে সিডের সেই সাইনবোর্ড নেই।
এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে কথা হয় সিডের নির্বাহী পরিচালক রেবেকা সুলতানার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সিডের সাত সদস্যর নির্বাহী কমিটির বর্তমান সভাপতি জন এস বিশ্বাসের বাড়ি যশোরের খড়কি অঞ্চলে। আমি সমিতির সাধারণ সম্পাদক। আমার ছেলে সহসভাপতি। কমিটির বাকি চার সদস্যর বাড়ি মনিরামপুরে। রেবেকা সুলতানা বলেন, মনিরামপুরে আমাদের কার্যক্রম বন্ধ আছে। আমি ঢাকার শ্যামলীতে অফিস করি। গ্রামে ফিরলে কমিটির সদস্যদের নিয়ে মিটিং হয়।
বর্তমানে সিডের কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে রেবেকা সুলতানা বলেন, ঝিনাইদহসহ দুটো জেলায় আমরা সরকারের পাশাপাশি ভিজিডির কাজ করছিলাম। সেটার মেয়াদ শেষ হয়েছে। এখন কোন কার্যক্রম নেই।
সিডের সভাপতি জন এস বিশ্বাস বলেন, দীঘিরপাড়ে আমাদের কার্যক্রম অনেক আগে বন্ধ হয়ে গেছে। এখন কার্যক্রম ঢাকা ভিত্তিক হয়ে গেছে। এনজিওটি বর্তমানে কি কার্যক্রম চালাচ্ছে তা জানতে চাইলি জন এস বিশ্বাস বলেন, আমি খুবই অসুস্থ। কথা বলতে পারছি না।
যশোরের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম রাকিব বলেন, পর্যবেক্ষক নির্ধারণের বিষয়ে সংস্থাগুলো সরাসরি নির্বাচন কমিশনে আবেদন দেয়। কমিশন থেকে তাদের নিবন্ধন দেয়। এবিষয়ে সংস্থাগুলোর কার্যক্রম যাচাই করতে নির্বাচন কমিশন আমাদের কাছে কোন তথ্য চান না। যদি কমিশন এ বিষয়ে জানতে চান তাহলে মনিরামপুরের সিড সংস্থার বিষয়ে আমি বলব।
© সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ স্বপ্নভূমি নিউজ